Sunday, 21 August 2016

স্মার্টফোন/ট্যাবলেট/ল্যাপটপ এর জন্য কোন ডিসপ্লে ভালো,জেনে নিন স্মার্টফোন/ট্যাবলেট/ল্যাপটপ এর ডিসপ্লে নিয়ে বিস্তারিত টিউন এবং সকল দ্বন্দের সমাধান

আমরা সাধারণত যখন স্মার্টফোন/ট্যাবলেট/ল্যাপটপ কিনি,এসময় আমরা ফোনের র্যাম (Ram) প্রোসেসর(Prossesor) ইত্যাদি দিককে প্রাধান্য দেই আর ডিসপ্লে (Display)বা স্ক্রীন (Screen)এর কথা একদমই ভাবিনা (85%)।হয়ত প্রযুক্তি এত উন্নত হয়ে গিয়েছে যে  TFT,Retina বা IPS ইত্যাদি বিষয় আমরা বুঝিই না। তবে একটি স্মার্টফোন এর ক্ষেত্রে স্ক্রীন বা ডিসপ্লে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমাদের চোখ সারাক্ষন এই ডিসপ্লে এর ওপর থাকে। সুতরাং ডিসপ্লে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর আজ আমি এ নিয়েই কথা বলব।

সাধারনত ডিসপ্লে পছন্দ করার আগে দুটো জিনিস আামাদের সামনে আসে এদের ভেতর প্রথমত একটি  হল;ডিসপ্লে বা স্ক্রীন সাইজ (size),কি সাইজ আমাদের জন্য ভালো আর কোনটি আমাদের কাজেরজন্য পারফেক্ট  এটি ঠিক করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি তা হল PPI - Pixel Per Inch বা Pixel Density। আমরা PPI - পিপিআাই সম্পর্কে পরে কখনও টিউনে আলোচনা করব।

LCD Display (Liquid Crystal Display)

এখন আমরা স্মার্টফোনের ডিসপ্লে এর ভেতরে সচরাচর সবচেয়ে বেশি LCD (Liquid Crystal Display)ডিসপ্লেই দেখি,পূর্বে কম্পিউটার এর যে মোটা মনিটর ছিলো তার নাম CRT,কিন্ত CRT তো আর ফোনে ব্যবহার করা সম্ভব নয়,তাই ফোনে এই LCD স্ক্রীন  ই ব্যবহার করা হয়।

TNP Display (Twisted Nematic Panal)

LCD স্ক্রীন বা ডিসপ্লে কিন্তু আবার সরাসরি ভাবে ব্যবহার হয়না, এই LCD এর ভেতর আবার রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ।প্রথমেই যে নামটি আসে তার নাম TNP বা Twisted Nematic Panal এটি প্রথম দিককার কম্পিউটার এর মনিটর এবং ৪-৫ বছর আগেকার এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনে দেখা যেত।এই LCD এর কালার রেপুটেশন একদমই বাজে,ভিউইং অ্যাঙ্গেল একদমই বাজে এবং পাওয়ার ও বেশি খরচ করত। এখন ও যদি এই TNP LCD সহ কোন কিছু পান তবে তা পরিহার করাই ভালো।

TFT Display (Thin Flim Transistors LCD)

এরপর আসে হল TFT ডিসপ্লে বা Thin Flim Transistors LCD পূর্বের TNP কে একটু উন্নত করে এই TFT ডিসপ্লে তৈরি রা হয়েছে,এটি TNP থেকে একটু উন্নত তবে এরও কালার রেপুটেশন ও ভিউইং অ্যাঙ্গেল ভালো না এটিও পাওয়ার বেশি খরচ করে।২-৩ বছর আগের চাইনা এন্ড্রয়েড এবং বর্তমান সময় এর অনেক এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনে এই ডিসপ্লে লক্ষ করা যায়।

IPS Display (In Plane Switching LCD)

এবার আসল  IPS LCD -  In Plane Switching LCD এটি বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি।বড়তমান সময়ে সবচাইতে উন্নত LCD হল IPS  LCD এতে কালার রেপুটেশন সবচাইতে ভালো,আপনি আপনার চোখ কোন রং যেভাবে দেখেন এই IPS ডিসপ্লেতেও একই দেখতে পারবেন।এ ডিসপ্লেতে যে রংই দেখতে পান না কেন, তা একদম আসল। দ্বিতীয়ত এর ভিউইং অ্যাঙ্গেল খুব ভালো আপনি ১৮০ ডিগ্রী না হলেও ১৬০ বা ১৫০ ডিগ্রী এঙ্গেল থেকে এই ডিসপ্লে তে যেকোনো কিছু দেখতে পারবেন।

SUPER LCD

এর পর আসে হল Super LCD - TFT ডিসপ্লে কে আরেকটু উন্নত করে এটি তৈরি করা হয়েছে তবে এটি IPS ডিসপ্লের মানের কাছে হার মেনেছে।

LED/OLED/Amoled Display

এতক্ষন তো কথা হল  LCD নিয়ে এবার আসি LED ডিসপ্লে নিয়ে। স্মার্টফোন এর ক্ষেত্রে LED ডিসপ্লে হয় সাধারনত দুটি একটি হল OLED এবং আরেকটি হল AMOLED। এখন এই দুটির মধ্যকার পার্থক্য হল: LCD তে আমরা যা দেখছি, সবুজ,নীল,হলুদ,নীল যে কালারই দেখি না কেন এর পেছনে রয়েছে একটি পর্দা আর এর সাথে রয়েছে একটি ব্যাকলাইট,আমরা LCD তে যা দেখি না কেন, পেছনে সারাক্ষণ এই লাইট জ্বলবেই।
আর অন্যদিকে OLED বা Amoled এর ক্ষেত্রে প্রতিটা পিক্সেল এর জন্য আালাদা Led রয়েছে, সুতরাং যখন যে আলোর প্রয়োজন হবে তখন শুধু সে আলোই জ্বলবে।ধরুন কালো রং দেখাবে বা কোন ছবির কালো অংশ বা কালো রং তখন  LED জ্বলবেই না,যেখানে LED জ্বলবেই না তার চাইতে অন্ধকার তো আর কিছুই না।
OLED বা AMOLED তাই দেখা যাচ্ছে যখন কালো তখন কালোই, আর যখন সাদা তখন একদম ব্রাইট সুতরাং OLED বা AMOLED ডিসপ্লে তে আমরা কনট্রাস্ট বেশি পাব।আর OLED বা AMOLED ডিসপ্লেতে কালার গুলো চোখে দারুন ফুটে উঠবে আর  ভিউইং এঙ্গেল IPS ডিসপ্লে এর মতনই।যেহেতু প্রতিটি পিক্সেল এর জন্য আলাদা Led তাই ব্যাটারি খরচ কম হয়, আর এটি IPS ডিসপ্লে এর তুলনায় এটি একটু চিকন।
আর যেখানে IPS ডিসপ্লেতে সারাক্ষন ব্যাকলাইট জ্বলে তাই সূর্যের আলোতে এটি দেখা যায় ভালো,আর যেকানে OLED বা AMOLED এর প্রতিটি পিক্সেল এর জন্য আালাদা Led তাই সূর্যের আলোয় দেখতে একটু সমস্যা হয়।আর  LED এর তুলনায় IPS এ বব্যাটারি খরচ কম।তবে উভয়ই তাদের নিজ নিজ দিক দিয়ে ভালো।
যেহেতু প্রতিটি পিক্সেল এর জন্য আলাদা আলাদা নিজস্ব LED রয়েছে তাই ব্যাটারির পাওয়ার কম খরচ হলেও,এই ডিসপ্লেটি তৈরি করতে বেশি খরচ হয় আর তাই এর দাম IPS এর তুলনায় একটু বেশি।
সুতরাং উপরের দিক বিবেচনা করে আপনি IPS LCD না LED তা নিজেই বিবেচনা করে দেখে নিন।

Retina Display

রেটিনা ডিসপ্লে,কেন এটি আইফোন ছাড়া অন্য কোথাও নেই,এর বিশেষত্ব কি? এমন অনেক প্রশ্ন আমাদের মাথায় অবশ্যই ঘুরে আসছে আর আজও ঘুরছে,তাই  হয়ত আশা করি এই (Retina Display) - রেটিনা ডিসপ্লে এর রহস্য আপনাদের কাছে উন্মোচিত হবে।



আমাদের যাদের আইফোন- Iphone আছে বা নেই তারা সবাই জানি যে  এটি কেনার আগে এটির অন্যতম মূল আকর্ষন হল এর Retina  Display আর আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না কি এই রেটিনা ডিসপ্লে যা অন্য কোন স্মার্টফোন এ নেই? কেবল IPhone- আইফোন এ আছে -- এখন  বলি এই রেটিনা ডিসপ্লে এই নামটা আসলে কিছু নয়; অ্যাপেল তাদের মার্কেটিং টার্ম এর ক্ষেত্রে বা মার্কেটে একটা আকর্ষন তাদের Iphone- আইফোন এর দিকে আনার জন্য এই টার্মটি ব্যবহার করেছিল সর্বপ্রথম যখন Iphone 4S launch হয় তখন।
অ্যাপেল তাদের Iphone 4S এ IPS ডিসপ্লে ব্যবহার করেছিলো আর যাতে PPI- Pixel Per Inch বা Pixel Density ছিলো ৩২৬ যা,সে সময় সচরাচর অন্য স্মার্টফোনে ছিল না,আর তখন থেকে এর নাম তারা দেয় Retina Display যেখানে বাস্তবে এটি একটি IPS  Display...বর্তমানে IPhone 6s এও এই PPI বা Pixel Density ৩২৬ ই রাখা হয়েছে, আর যেখানে বর্তমানে নতুন নতুন স্মার্টফোন;যেমন: galaxy s6,note 5  lg g4 ইত্যাদি স্মার্টফোন গুলোতে PPI ৫০০ এর উপরে!!
!


সুতরাং PPI ৩০০ বা ৩২৬ এর উপরে যে সব IPS ডিসপ্লে রয়েছে তাদের সবাইকে রেটিনা  ডিসপ্লে বলা যাবে,কেননা এটি কেবল একটি নামমাত্র,যা অ্যাপেল তাদের আইফোন এর প্রতি আকর্ষন বাড়ানোর জন্য সৃষ্টি করেছিলো।
আশা করি সকলের এই টিউন ভালো লেগেছে,টিউমেন্ট এ জানাবেন। নির্বাচিতটিউন মনোনয়ন দিতে পারেন  

0 comments:

Post a Comment