Saturday, 3 December 2016

আর নয় পেপালের জন্য অপেক্ষা – ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দারুন এক সুখবর নিয়ে এলাম!

পেপালের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কে কে হাত তোলেন?

যদি বলি পেপালের বিকল্প চলে এসেছে, তারপরও কি পেপালের জন্য অপেক্ষায় থাকবেন? বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘদিনের দাবী অগ্রাহ্য করে পেপাল এখনও বাংলাদেশে আসা থেকে বিরত রয়েছে।

তারা দোষ দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং নীতির। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে, এর চেয়ে কঠিন নিয়ম-কানুন মেনেও দিব্যি ব্যবসা করছে পেপাল! আমরা তাদের কাছে বরবরই উপেক্ষিত! তাহলে উপায় কি?

উপায় এসে গেছে! সে কথায় পরে আসছি- তার আগে চলুন একটু দেখে নেই যে কেন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেপাল এত বেশি জরুরী।

কেন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেপাল এত বেশি প্রয়োজন?

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে আউটসোর্সিং নিয়ে সকলের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যথেষ্ঠ পরিমাণ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

বেকার সমস্যায় জর্জরিত আমাদের দেশের জন্য আউটসোর্সিং নিঃসন্দেহে একটি সুফলবার্তা বয়ে এনেছে।

কিন্তু ফ্রিল্যান্সার হতে গিয়ে সবাই প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য করে তা হচ্ছে বাংলাদেশে অর্থ নিয়ে আসতে জটিলতা।

                                                       অর্থ উত্তোলনের নানাবিধ পদ্ধতি রয়েছে যার কোন কোনটি ঝামেলাবিহীণ কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল, আবার কোন কোনটি অল্প খরচে করা যায় কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করতে গিয়ে নানাবিধ বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো বিষয়টি যথাযথ উপলব্ধি করতে না পারায় তাদের কাছ থেকে আশানূরূপ সাড়া পাওয়া যায় না।

                                            সবকিছু ছাপিয়ে প্রধান যে বাধাটি শুরু থেকেই প্রত্যেকটি ফ্রিল্যান্সারকে ভোগান্তিতে ফেলেছে তা হচ্ছে, ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের জন্য সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি- পেপাল (Paypal) এর সার্ভিস বাংলাদেশে নেই।

পেপালের কি কোন বিকল্প বাংলাদেশে নেই?

হ্যা আছে। কিন্তু তাদের কি বিকল্প বলব, নাকি দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো বলব- তা নিয়ে আমি সন্দিহান।

                               আসুন একটু দেখে নেয়া যাক, আউটসোর্সিং কাজ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশে নিয়ে আসতে বর্তমানে কি কি পদ্ধতি রয়েছে এবং এগুলোর সমস্যাগুলো কি কি?

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারঃ

             কিছু কিছু ফ্রিল্যান্সিং সাইট রয়েছে যাতে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা যায়।

এটি অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুত পদ্ধতি।

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হওয়ার শুরুর দিকে অনেকেই এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে বাইরে থেকে পেমেন্ট আনাতে সক্ষম হয়েছে।

                                 বেশিরভাগ ব্যাংক ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা আনার ব্যাপারটি সাপোর্ট না করলেও, কিছু কিছু ব্যাংক এই সার্ভিস দিত।

                          ফলে সমস্যা হয়নি খুব একটা। কিন্তু কিছুদিন পর তাদের একটা নিয়ম হল যে- ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,

                     বাংলাদেশী কোন ব্যক্তিকে অর্থ পাঠাতে পারবে না। কারণ জানা গেল বাংলাদেশ সরকার ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এর মাধ্যমে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ব্যক্তিকে টাকা পাঠানোয় অনুমতি প্রদান করে না।

সরাসরি ব্যাংক চেক:

                   শুনতে অনেক সহজ মনে হলেও আসলে এই পদ্ধতিতে অর্থ উত্তোলনে ফ্রিল্যান্সারদেরকে যথেষ্ঠ ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

                               কোন কোন ওয়েবসাইট থেকে এই পদ্ধতি ছাড়া অর্থ উত্তোলনের অন্য কোন উপায়ও নেয়। উদাহরণসরূপ, গুগল এডসেন্স থেকে আয়ের টাকা উত্তোলনের একমাত্র উপায় হচ্ছে চেকের মাধ্যমে।

                                     এই পদ্ধতির প্রধান সমস্যা হচ্ছে চিঠি পেতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। তারপর সেই চেক ব্যাংকে নিজের একাউন্টে জমা দেবার পর টাকা জমা হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়।

                                                   তার উপর ১০০ ডলারের একটি চেকে ব্যাংককে ২৫ ডলার মত ফি দিতে হয়। কয় টাকাই বা কামাবেন বলুন, তার উপর যদি আবার কমিশনেই সব কেটে ফেলে! হায়রে!

ব্যাংক থেকে ব্যাংকে ওয়্যার ট্রান্সফার:

                              এই পদ্ধতিটিতে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে অর্থ সরাসরি ব্যাংকে জমা হয়ে যায়। এটি ঝামেলাবিহীন এবং নিরাপদ একটি পদ্ধতি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার কি জানেন?

                                 এই পদ্ধতিতে খরচ পড়ে অনেক বেশি, প্রায় ৪৫ ডলারের মত। আরও কষ্টের বিষয় হচ্ছে আপওয়ার্ক, ফাইভারের মত আউটসোর্সিং সাইটগুলোতে এই পদ্ধতিটি খুব একটা জনপ্রিয় নয়।

                কিছু সাইটে এই পেমেন্ট সিস্টেম আছে, কিন্তু সাইটগুলো নিরভরযোগ্য নয়। অর্থাৎ আপনি কাজ করে দেবেন, কিন্তু আপনাকে বিনিময়ে পয়সা দেবে কি না নিশ্চিত করে তা বলা যায় না!

পেওনার ডেবিট মাস্টারকার্ড:

                            ইদানিংকালে প্রায় সকল আউটসোর্সিং সাইটগুলো এই মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের কাছেও এটি বেশ জনপ্রিয়।

                                এই পদ্ধতিতে প্রথমে ফ্রিল্যান্সারদের ঠিকানায় একটি মাস্টারকার্ড পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর মাস শেষে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে কার্ডে অর্থ জমা হয়ে যায়।

                              আমাদের দেশের কয়েকটি ব্যাংকের ATM থেকে এই কার্ডের মাধ্যমে যেকোন সময় টাকা তোলা যায়। কিন্তু প্রতিবার টাকা উত্তোলন করতে ২ ডলারসহ উত্তোলনকৃত অর্থের ৩% ফি দিতে হয়।

                                  আবার এই কার্ড দিয়ে অনলাইনে ডোমেইন, সার্ভার স্পেস বা যেকোন ধরনের পণ্য কেনাকাটাও করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রতিবার লেনদেনে অনেক চার্জ কাটে।
            
                                     প্রতি বছরে ২৯ ডলার চার্জ দিতে হবে কোন প্রকার লেনদেন না করা সত্ত্বেও! তাছাড়া অনলাইনে এভাবে লেনদেন করাটা ভাইরাস এবং স্পাইওয়ারের কারনে বেশ ঝুকিপূর্ণ।

                                         যে কোন সময় কার্ড হ্যাক হয়ে সর্বস্ব হারানোর আশংকা থাকে। আরও একটা সমস্যা হচ্ছে এই কার্ডে আপনি পেমেন্ট আনলেন বাইরে থেকে, কিন্তু ধরুন যদি বাইরে পেমেন্ট করার প্রয়োজন পড়ে? তাহলে কি করবেন?

                            বাংলাদেশ থেকে আপনার পকেটের টাকা খরচ করে পেওনিয়ারে ডলার লোড করার কোন কায়দা নেই। একমাত্র উপায় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া।

                তাদের কাছ থেকে ডলার ট্রান্সফার করে দিলেন, বিনিময়ে টাকা দিলেন হাতে হাতে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে প্রতারনার শিকার হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে!

কেন পেপাল সবচেয়ে সেরা?

                                              অনলাইন পেমেন্টের সবগুলো পদ্ধতির মধ্যে ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের সবচেয়ে জনপ্রিয়, নিরাপদ এবং সহজ পদ্ধতিটি হল পেপাল (Paypal)।

                                     বিশ্বের ১৯০ টি দেশে ১৮ ধরনের মূদ্রায় পেপালের সার্ভিস রয়েছে। পেপালের আগমনের পূর্বে ইকমার্স অতটা জনপ্রিয় ছিল না। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পেপাল অনলাইনে অর্থ লেনদেনের ধারনাটাকেই পাল্টে ফেলে।

                                    অনলাইনে নিলাম করার জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ই-বে (www.eBay.com) ২০০২ সালে পেপালকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। অনলাইন পেমেন্টের জন্য পরিপূর্ণ সমাধান হচ্ছে পেপাল, যা অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

                       ব্যবহারকারীর ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ও ব্যাংকের তথ্য পেপালে সংরক্ষিত থাকে, যা ইন্টারনেটে কেনাকাটা করার সময় অন্য কেউ জানতে পারবে না।

                                    একজন পেপাল ব্যবহারকারী আরেকজন পেপাল ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মিনিটের মধ্যেই অর্থ প্রদান করতে পারে। পেপালের বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এটি ব্যবহার করে অর্থ অর্থ জালিয়াতি প্রায় অসম্ভব।

                                       একারণে পেপাল সারা বিশ্বে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য একটি সার্ভিস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন কোন ইকমার্স অথবা আউটসোর্সিং সাইট পাওয়া যাবে না যা পেপাল সমর্থন করে না। কিন্তু এসব কথা বলে আসলে কি লাভ? পেপাল তো বাংলাদেশে নেই।

                        বেশ কয়েকবার আসার কথা শুনা গেলেও, আসলে তা ভুয়া নিউজ ছিল। সুদূর ভবিষ্যতেও পেপাল আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারদের দিকে কখনও সদয় দৃষ্টি দেবে না, এই ব্যাপারে আমি সুনিশ্চিত!

তাহলে পেপাল এর বিকল্প হতে পারে এমন কোন উপায় কি নেই?

হ্যা, উপায় আছে! এই উপায় নিয়ে এসেছে পেপালের সেরা বিকল্প- কিউকার্ড।

                      আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন যে বেশ কিছুদিন হয়ে গেল বাংলাদেশ স্বল্প পরিসরে বিজনেস শুরু করেছে নিউজিল্যান্ডের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কিউকার্ড।

                          শুরুতে এই কার্ড দিয়ে শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক পেমেন্ট করা যেত। কিন্তু এখন থেকে আপনি কিউকার্ড এর সাহায্যে ফ্রিল্যান্সিং করে উপার্জিত অর্থ দেশে আনতে পারবেন। চাইলে কার্ডে রেখে এই অর্থ অনলাইনে শপিং করার জন্য ব্যয় করতে পারবেন।

                   অথবা যেকোনো লোকাল ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে উইথড্র করতে পারবেন। বিস্তারিত সমস্ত তথ্য পাবেন কিউকার্ড এর

                             অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেঃ http://www.mastercards.co.

কেন কিউকার্ড ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেপালের সেরা বিকল্প সমাধান?

আসুন এক নজরে দেখে নেই- কিউ কার্ড আপনাদের কোন কোন সমস্যাগুলির সমধান করবে?

১) যে সকল আউটসোর্সিং সাইট মাস্টারকার্ড সাপোর্ট করে, সেখান থেকে আপনি কিউকার্ডের সাহায্যে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে কিউকার্ড কোন প্রকার এক্সট্রা চার্জ রাখে না আপনার কাছ থেকে।

২) শুধু দেশের বাইরে থেকে অর্থ আনয়ন নয়; আপনি মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ কিংবা লোকাল ব্যাংক থেকে ট্রান্সফারের মাধ্যমেও আপনার কিউকার্ডে ফান্ড ডিপোজিট করতে পারবেন।

৩) সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- আপনি কিউকার্ড দিয়ে সরাসরি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন। ফলে সবসময় একটি আউটসোর্সিং সাইটের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না আপনাকে।

৪) কিউকার্ড এর এই বিশেষ মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে অ্যামাজন, ইবে, আলিবাবা, গুগল প্লে সহ অন্যান্য গ্লোবাল অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করতে পারবেন।

৫) বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ও গুগলে পেইড বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন আপনার কিউকার্ডে থাকা ডলার দিয়ে।

৬) GRE, GMAT, TOELF ইত্যাদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান; ডোমেইন ও হোস্টিং এর পেমেন্ট প্রসেসিং; হোটেল বুকিং, গাড়ি ভাড়া ও প্লেনের টিকেট কাটা ইত্যাদি লেনদেন করতে পারবেন।

তারপরও অপেক্ষা করবেন পেপালের জন্য?

                                    প্রকৃতপক্ষে পেপাল কবে বাংলাদেশে সার্ভিস প্রদান করবে সে অপেক্ষায় বসে না থেকে আমাদের নিজেদেরকেই উচিত তার বিকল্প রাস্তা বেছে নেওয়া।

                            বাংলাদেশের তরুনরা আজ এতটাই স্মার্ট যে, শুধুমাত্র এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারলে নিজেরাই বাংলাদেশে ইকমার্সের বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলতে পারবে।

                                                                           তাই আসুন, চিলে কান নিয়েছে ভেবে, তার পেছনে না ছুটে আমরা কিউকার্ড এর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

0 comments:

Post a Comment